Wednesday, 30 April 2025

Short Stories ll Bengali ll Brain Tech Tutorial

একদিন এক বাঘ ও এক গাধার মধ্যে ঘাসের রং নিয়ে তর্ক শুরু হলো। কেউ কারো কাছে হার মানতে রাজী নয়। গাধা বাঘকে বললো, “ঘাসের রং নীল।” বাঘ বললো, “না, ঘাসের রং নীল নয়, সবুজ।” 

একজন বলে নীল, আর অন্যজন বলে সবুজ। নীল-সবুজ, নীল-সবুজ করতে করতে ওরা কেউ কারো কাছে বশ্যতা স্বীকার করতে রাজী নয়। শেষমেষ দু’জনে ঠিক করলো তারা পশু রাজা সিংহের কাছে বিচার চাইতে যাবে।

 
দু’জনে সিংহের কাছে যাচ্ছিলো।  সিংহের কাছাকাছি পৌঁছতেই গাধা চিৎকার করে সিংহকে বলছিলো, “পশুরাজ, ঘাসের রং নীল, তাই না?”
সিংহ খুব শান্ত গলায় গাধাকে বললো, “হ্যাঁ, একদম ঠিক বলেছো, ঘাসের রং নীল।”

তখন গাধা সিংহকে বললো, “পশুরাজ দেখুন তো, বাঘ আমার সাথে শুধু তর্কই করে যাচ্ছিলো, সে কখনোই মানতে রাজী নয়, ঘাসের রং নীল। বাঘকে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।” 

তখন পশুরাজ সিংহ বললো, “ঠিক আছে, তাকে শাস্তি দিচ্ছি। বাঘের শাস্তি হলো তাকে পাঁচ বছর পর্যন্ত চুপচাপ থাকতে হবে, সে আর গাধার সাথে কথা বলতে পারবে না।” 

এ শাস্তির কথা শুনে বাঘ পশুরাজ সিংহকে জিজ্ঞেস করলো, “ঘাস সবুজ হওয়া সত্ত্বেও আপনি কেন গাধার সাথে সুর মিলিয়ে বলছেন ঘাস নীল?”
তখন পশুরাজ সিংহ বাঘকে বললো, “তুমিই সঠিক, ঘাসের রং সবুজ। কিন্তু যে কেহ সত্য মানতেই চায় না, তার সাথে তর্ক করার কোনো মানে হয় না। তোমাকে এই শাস্তি দিলাম গাধার সাথে তর্ক করে তোমার সময় যাতে আর নষ্ট না হয়।” 

শিক্ষনীয় বিষয়: যে শিখতে চায় না, কেবল তর্কে জিততে চায়, তার সাথে তর্ক করো না।

*সংগৃহীত ও সামান্য পরিমার্জিত। লেখকের নাম জানা যায়নি।

Short Stories ll Bengali ll Brain Tech Tutorial

হাতির ভিতরে শিয়াল
-উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী


রাজার যে হাতিটা তাঁর আর সকল হাতির চেয়ে ভালো আর বড় আর দেখতে সুন্দর, সেইটে তাঁর 'পাটহস্তী'। সেই হাতিতে চড়ে রাজামশাই চলাফেরা করেন, আর তাকে খুব ভালোবাসেন।

একদিন রাজার পাটহস্তী মরে গেল। রাজা অনেকক্ষণ ভারি দুঃখ করলেন, শেষে বললেন, 'ওটাকে ফেলে দিয়ে এস।'

তখন সেই হাতির পায় বড়-বড় দড়ি বেঁধে পাঁচশো লোক টেনে তাকে মাঠে ফেলে দিয়ে এল।

সেই মাঠের কাছে এক শিয়াল থাকত। সে অনেক দিন পেট ভরে খেতে পায়নি। মাঠে মরা হাতি দেখতে পেয়ে, সে খুব খুশি হয়ে এসে, তাকে খেতে আরম্ভ করল। তার এতই খিদে হয়েছিল যে, খেতে-খেতে সে হাতির পেটের ভিতরে ঢুকে গেল, তবুও তার খাওয়া শেষ হল না। এমনি করে দুদিন চলে গেল, তখনো সে হাতির পেটের ভিতরে বসে কেবল খাচ্ছেই। ততদিন রোদ লেগে চামড়া শুকিয়ে, হাতির পেটের ভিতরে ফুটো ছোট হয়ে গেছে, আর শিয়ালও অনেক খেয়ে মোটা হয়ে গেছে। তখন তো তার ভারি মুশকিল হল। সে অনেক চেষ্টা করেও হাতির পেটের ভিতর থেকে বেরুতে পারল না। এখন উপায় কী হবে?

এমন সময় তিনজন চাষী সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের দেখতে পেয়েই শিয়ালের মাথায় এক ফন্দি জোগাল। সে হাতির পেটের ভিতর থেকে তাদের ডেকে বললে, 'ওহে ভাই সকল, তোমরা রাজার কাছে একটা খবর দিতে পারবে? আমার পেটে যদি পঞ্চাশ কলসি ঘি মাখানো হয়, তবে আমি উঠে দাঁড়াব।'

চাষীরা তাতে ভারি আশ্চর্য হয়ে বলল, 'শোন-শোন, হাতি কী বলছে! চল আমরা রাজামশাইকে খবর দিইগে।' তারা তখুনি রাজার কাছে ছুটে গিয়ে বললে, 'রাজামশাই, আপনার সেই মরা হাতি বলছে যে তার পেটে পঞ্চাশ কলসি ঘি মাখালে সে আবার উঠে দাঁড়াবে। শিগগির পঞ্চাশ কলসি ঘি পাঠিয়ে দিন।'

এ কথায় রাজামশাই যে কী খুশি হলেন, কী আর বলব! তিনি বললেন, 'আমার হাতি যদি বাঁচে পঞ্চাশ কলসি ঘি আর কত বড় একটা কথা! হাজার কলসি ঘি নিয়ে তার পেটে মাখাও।' তখুনি হাজার মুটে হাজার কলসি ঘি নিয়ে মাঠে উপস্থিত করল দুহাজার লোক মিলে সেই ঘি হাতির পেটে মাখাতে লাগল। সাতদিন খালি 'আনো ঘি' 'ঢাল ঘি' ছাড়া সেখানে আর কোনো কথাই শোনা গেল না।

সাতদিনের পরে শিয়াল দেখলে যে, হাতির চামড়াও ঢের নরম হয়েছে, পেটের ফুটোও ঢের বড় হয়েছে, এখন সে ইচ্ছে করলেই বেরিয়ে আসতে পারে। তখন সে সকলকে ডেকে বলল, 'ভাই সকল, এইবার আমি উঠব উঠব। তোমরা একটু সরে দাঁড়াও নইলে যদি আমি মাথা ঘুরে তোমাদের উপরে পড়ে-টড়ে যাই!'

তখন ভারি একটা গোলমাল হল। যে যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই ধাক্কা মেরে বলছে, 'আরে বেটা, শিগগির সর! হাতি উঠছে, ঘাড়ে পড়বে।'

একথা শুনে কি কেউ আর সেখানে দাঁড়ায়? ঘি-টি সব ফেলে তারা পালাতে লাগল, একবার চেয়েও দেখল না, হাতি উঠেছে কি পড়েই আছে। তা দেখে শিয়াল ভাবলে, 'এই বেলা পালাই।' তখন সে তাড়াতাড়ি হাতির পেটের ভিতর থেকে বেরিয়ে দে ছুট।



Posts

বাংলা সাহিত্য পরিচয়

এক নজরে: বাংলা সাহিত্যে প্রথম  ১.  প্রথম উপন্যাস – আলালের ঘরের দুলাল ২.  মুসলমান চরিত্র অবলম্বনে প্রথম নাটক - জমিদার দর্পণ ৩.  প...